সাংবাদিক নির্যাতন

তুচ্ছ ঘটনায় চবিতে সাংবাদিককে বেধড়ক পেটালো ছাত্রলীগ


storage/app/Chhatra League thrashed a journalist in Chabi for a trivial incident

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ◾

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ বিষয়ে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। দোস্ত মোহাম্মদ নামে এই সাংবাদিকের মুখে প্রথমে গরম চা মেরে দেয়া হয়। এসময় সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ‘তুই সাংবাদিক হইছোস তো কি হইছে’ বলে তাঁকে মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং পেটে লাথি মারতে শুরু করে। ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

সোমবার (১৯ জুন) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে একটি চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ ও  উপ-দপ্তর সম্পাদক আরাফাত রায়হান এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানা যায়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও একটি অনলাইন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

অভিযুক্তরা হলেন- আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও চবি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ, শাখা  ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী  ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আরাফাত রায়হান। এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত আরও ১০-১২ জনের নাম পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

এদিকে ওই সাংবাদিকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালে নিয়ে আসা হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমার্জেন্সি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন তাকে। মেডিক্যালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি বমি করে, তাহলে সিটিস্ক্যান করানো লাগবে। এছাড়া রোগীর কিডনিতে সমস্যা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছে।

ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে কি-না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ বলেন, সন্ধ্যায় স্টেশনে চা খেতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের খালেদসহ বেশ কয়েকজন বসে ছিলো সেখানে। একটি চেয়ার খালি থাকায় আমি সেটা নিয়ে আসার সময় খালেদ আমাকে বললো- ‘তুমি এটা কার অনুমতি নিয়ে নিচ্ছ?’ আমি খালেদকে আগে থেকে চিনতাম, ও আমাদের জুনিয়র। তাই বললাম ‘তুমি করে বলছো কেন? আমাকে চিনো?’ এরপর সে আমার সেশন জিজ্ঞেস করে। সেশন বলার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে থাকা গরম চা’সহ চায়ের কাপ আমার মাথায় মেরে দেয়।

তিনি আরও বলেন, এ সময় আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে সে বলে ‘তুই সাংবাদিক হইছোস তো কি হইছে?’ এ কথা বলেই তার সঙ্গে থাকা ১০-১২ জন আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়ের কাপ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং পেটে লাথি মারতে শুরু করে। এর মধ্যে আরাফাত রায়হান বেশি মারধর করেছে। বাকিদেরও চিনি। তবে সবার নাম এখন মনে করতে পারছি না। আমার কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা আছে। পেটে আঘাত পাওয়ায় পেট ফুলে যাচ্ছে, খুব অসুস্থ বোধ করছি। আমি চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।

তবে প্রধান অভিযুক্ত চবি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ বলেন, চেয়ার নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে তিনি খারাপ ব্যবহার করায় হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। মারধর করা হয়নি।
চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।